বন্ধুগণ, এবার দেখা যাক এই অনুষ্ঠানে কী পেলাম। অনেক রাজনৈতিক কর্মী এই অনুষ্ঠানে এসেছিলেন। কিন্তু সবাই এই অনুষ্ঠানকে রাজনীতির বাইরে রেখেছেন। আমার খুব ভালো লেগেছে।
প্রথম দিন মধ্যাহ্ন ভোজনের পর হলো একটি মনোরম আলোচনা। বিষয় ছিল “সত্যজিত রায়ের চলচ্চিত্র ও বাংলা সিনেমার পটপরিবর্তন।“ বক্তা ছিলেন শ্রী দেবাশিষ মুখোপাধ্যায়, শ্রী রঞ্জন বন্দোপাধ্যায় এবং শ্রীমতী মৌ রায়চৌধুরী। সঞ্চালনায় ছিলেন শ্রী গৌতম ভট্টাচার্য। এই সভায় শর্মিলা ঠাকুরও থাকার কথা ছিল। তিনি সকালে ছিলেন। অসুস্থতার কারণে তিনি চলে গিয়েছিলেন। বিকেলে একটি গানের অনুষ্ঠান হলো। এই অনুষ্ঠানে ছিলেন শ্রীমতী হৈমন্তী শুক্লা, শ্রী সৈকত মিত্র এবং শান্তনু বন্দোপাধ্যায়। সঞ্চালনায় ছিলেন শ্রীমতী মাণ্ডবী। এই অনুষ্ঠানটি আমাদের জন্য এক বিরাট প্রাপ্তি। খুব মনোজ্ঞ হয়েছিল এই অনুষ্ঠানটি।
দ্বিতীয় দিন হলো একটি বিশেষ অনুষ্ঠান। বিষয় ছিল “আজকের বাংলা সাহিত্যে সমাজ মাধ্যমের প্রভাব। বক্তা ছিলেন শ্রী বিনায়ক বন্দোপাধ্যায়, শ্রীমতী মৌ মিত্র, শ্রীমতী মৌপ্রিয়া নন্দী, প্রচেত গুপ্ত এবং বাংলাদেশের নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য। সঞ্চালনায় ছিলেন শ্রী স্নেহাশিষ সুর। বক্তারা একমত হলেন যে ফেসবুকে কে কটা লাইক পেলেন তা অমূলক। কারণ লেখকের সৃষ্ট সাহিত্যের গুণগত মান কটা লাইক পেয়েছেন তা দিয়ে পরিস্ফুট হয় না। শুধু লেখার ক্ষেত্রেই নয়, ষোলকলার যে কোন কলার ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। হ্যাঁ ইউটিউবে কটা লাইক পেলেন তাতে হয়তো কেহ কেহ কিছু পয়সা উপার্জন করলেন। কিন্তু কজনই বা নির্দিষ্ট সংখ্যা উতরে গিয়ে তা পেয়েছেন। সংখ্যার দিক থেকে তা খুবই নগণ্য। শ্রী প্রচেত গুপ্ত বললেন যে তিনি তো ফেসবুক অ্যাকাউন্ট খোলেনই নি। তেমনি শ্রী বিনায়ক বললেন যে তিনিও সম্প্রতি মাঝে মধ্যে ফেসবুক নিয়ে নাড়াচরা করেন। কিন্তু রেগুলার নন। তাতে তিনি কোন ক্ষতি হচ্ছে বলে মনে করেন না। কোন প্রকাশক ফেসবুকের ফলাফলে প্রভাবিত হন না। যে কাজটি হয়, তা হলো ফেসবুকের মাধ্যমে কিছু আত্মপ্রচার হয়ে থাকে। এই যা।
দ্বিতীয় দিনের আর একটি অনুষ্ঠান হলো সুবোধ সরকারের কবিতা পাঠ। বিকেলের দিকে ছিল আমার ও রীণার শ্রুতিনাটক “চন্দ্রযান২-য়ে বিক্রম ও মৃণালিণী”। মুম্বাই শাখার হয়ে আমার লেখা এই শ্রুতিনাটকটি মঞ্চে পরিচিত করান কলকাতা শাখার শ্রীমতী রমা চক্রবর্তী। তারপর করলাম আমি ও রীণা এই শ্রুতিনাটকটি। দ্বিতীয় দিন ছিল বাংলাদেশ দিবস। বাংলাদেশের বক্তারা সকালের অনুষ্ঠানে বলেছিলেন যে, বাংলাদেশের আঞ্চলিক ভাষাকে সাহিত্যের দরবারে আনার চেষ্টা করছেন। তাই রমাদি পরিচিতি করানোর সময় বলে দিয়েছিলেন যে এই শ্রুতিনাটকটি বাংলাদেশের প্রতি সমর্পিত। কারণ এই নাটকে বিক্রমের রোলটি ছিল বাঙ্গাল ভাষায়। শ্রোতাদের শ্রুতিনাটকটি খুব ভালো লেগেছিল। বিজ্ঞান নিয়ে শ্রুতিনাটকটি একটু অন্য রকমের হয়েছে বলে তাঁরা প্রতিফলিত করেছেন। শ্রোতাদের নিকট নাটকটি খুবই সমাদৃত হয়েছিল।
প্যারালাল সেশন থাকার জন্য অন্য মঞ্চে অনুষ্ঠিত “বাংলার লোকসংস্কৃতির ওপর বিবর্তন” আলোচনা সভাটি শুনতে পারি নি।
শেষ দিনের অনুষ্ঠানে ছিল বিষয় “বাংলা রঙ্গমঞ্চের দেড়শত বৎসর।“বক্তা ছিলেন শ্রী অশোক মুখোপাধ্যায়, সৌমিত্র বসু এবং সুকৃতি লাহিড়ী। এটিও একটি মনোজ্ঞ অনুষ্ঠান হয়েছিল। সমাপ্তি অধিবেশনে ভাষণ দেন ওখানকার বিধান সভার সদস্য এবং দমকল মন্ত্রী শ্রী সুজিত বসু। তাঁর বক্তব্য এবং ভাষায় মার্জিত রুচি সবার ভালো লেগেছে। এক কথায় তিন দিনের এই অনুষ্ঠানে আমরা প্রতিনিধিরা খুবই পরিতৃপ্ত।