চরাঞ্চলে আমন ধানের রেকর্ড পরিমাণ ফলন, কৃষকদের মুখে হাসি

0
ryo-yoshitake-cusz0Bg-5mQ-unsplash

চলতি মৌসুমে দেশের চরাঞ্চলগুলোতে আমন ধানের চাষে এসেছে আশার বাণী। অনুকূল আবহাওয়া ও তুলনামূলক কম বন্যার কারণে এবার ফসল হয়েছে প্রচুর। ফলে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন হাজারো কৃষক পরিবার, যারা বছরের অধিকাংশ সময় প্রকৃতি নির্ভর জীবনযাপন করেন।

সরেজমিনে দেখা গেছে, তিস্তা ও অন্যান্য নদীর পার্শ্ববর্তী চরাঞ্চলগুলোতে এখন শুধুই সবুজ আর সোনালি রঙের মেলবন্ধন। দিগন্তজোড়া মাঠজুড়ে পাকা ধানের শীষ দোল খাচ্ছে হাওয়ায়। সেই দৃশ্য দেখে খুশিতে আত্মহারা কৃষকেরা। এমন ফসলের মাঠ তাদের পরিশ্রমের প্রতিফলন।

তিস্তা নদীর তীরবর্তী ৫৯টি চরাঞ্চলে এবার প্রায় ৮ হাজার হেক্টর জমিতে আমন ধান আবাদ হয়েছে। অনেক কৃষক ইতোমধ্যে আগাম ধান কেটে ঘরে তোলাও শুরু করেছেন। গত বছরের তুলনায় ফলন এবার অনেক ভালো—যেখানে গত বছর বিঘা প্রতি উৎপাদন ছিল ৩ মণ, সেখানে এবার উৎপাদন হয়েছে ১২ থেকে ১৪ মণ পর্যন্ত। কিছু কিছু ক্ষেত্রে এ সংখ্যাও ছাড়িয়ে গেছে।

লালমনিরহাট সদর উপজেলার হরিণ চওয়া গ্রামের কৃষক ছাবের আলী বলেন, “ফলন খুব ভালো হয়েছে। কিন্তু ডিজেল, সার আর কীটনাশকের দাম বেড়ে যাওয়ায় খরচও বেশি হয়েছে। যদি বাজারে ধানের দাম ভালো পাই, তাহলে লাভ করতে পারব।”

আদিতমারী উপজেলার মহিষখোচা ইউনিয়নের চর গোবর্ধান গ্রামের কৃষক আজিজার রহমান জানান, তিনি ছয় বিঘা জমিতে আমনের চাষ করেছিলেন। এর মধ্যে দুই বিঘার ধান ইতোমধ্যে কেটে ঘরে তুলেছেন। বাকি জমির ধান আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে কাটবেন বলে জানান তিনি। তার ভাষ্য, “প্রতি বিঘায় গড়ে ১৭ মণ ধান পেয়েছি। গত বছর বন্যার কারণে ৩ বিঘা জমির ধান নষ্ট হয়েছিল, কিন্তু এবার তেমন কোনো ক্ষতি হয়নি।”

তবে চরাঞ্চলের কৃষকদের কিছু ক্ষোভও রয়েছে। হাবিবুর রহমান নামের এক কৃষক অভিযোগ করে বলেন, “কৃষি বিভাগের কেউ চরাঞ্চলে আসে না। তারা যদি নিয়মিত পরামর্শ দিত, তাহলে ফলন আরও ভালো হতে পারত।”

এ বিষয়ে লালমনিরহাট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক হামিদুর রহমান বলেন, “চরাঞ্চলে আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এবারের আমন ধানের ফলন ভালো হয়েছে। কৃষকদের মুখে হাসি ফিরেছে, তারা আশানুরূপ ফলন পেয়েছেন।”

চরাঞ্চলের এই সফলতা শুধু এলাকার কৃষকদের জন্য নয়, বরং দেশের খাদ্য নিরাপত্তার জন্যও একটি ইতিবাচক দিক। এই ধারা অব্যাহত রাখতে কৃষকদের পাশে আরও কার্যকরভাবে দাঁড়ানো দরকার, যাতে ভবিষ্যতে প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের ঝুঁকি সত্ত্বেও ফসলের উৎপাদন ধরে রাখা যায়।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।