ভারতের উদীয়মান বৈদ্যুতিক ট্রাক্টর বাজারের ভিতরে
ভারতে বৈদ্যুতিক গাড়ির (EV) বিপ্লব মূলত মেট্রোপলিটন শহরগুলোতেই দেখা গেলেও, বর্তমানে অনেক প্রথম সারির সরঞ্জাম প্রস্তুতকারক (OEM) দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্তরের শহর এবং গ্রামীণ এলাকাগুলোতেও তাদের বিক্রি বাড়াতে মনোযোগ দিচ্ছে। বৈদ্যুতিক গাড়ির ক্রমবর্ধমান চাহিদা এবং সরকারি সহায়তার কারণে অ্যাম্বুলেন্স থেকে শুরু করে ট্রাক এবং এমনকি ট্রাক্টর পর্যন্ত এর ব্যবহার বাড়ছে।
Vehicle Registry-র তথ্য অনুযায়ী, 2025 সালে ভারতে ২৫টি বৈদ্যুতিক ট্রাক্টর রেজিস্ট্রি করা হয়েছে। যদিও এই সংখ্যাটি দুই চাকা, তিন চাকা বা চার চাকার গাড়ির তুলনায় খুবই কম, তবুও দেখা যাচ্ছে এই বাজারে চাহিদা বাড়ছে এবং প্রতি বছর প্রায় ৬৬% প্রসারিত হচ্ছে।
তবে এই উন্নতির পথে কিছু সমস্যাও রয়েছে। অনেক রাজ্যেই নির্ভরযোগ্য বিদ্যুতের অভাব একটি বড় বাধা। গ্রামীণ অঞ্চলে বিদ্যুতের নিয়মিত ওঠানামা করার কারণে কৃষকদের জন্য বৈদ্যুতিক ট্রাক্টরের ওপর ভরসা করা কঠিন হয়ে পড়ছে, কারণ এটি চার্জিংয়ের ওপর নির্ভরশীল। এছাড়াও কৃষিকাজের সময়টাও খুব গুরুত্বপূর্ণ, যা বিভিন্ন অঞ্চলের ফসলের ওপর নির্ভর করে। সঠিক সময়ে ট্রাক্টর ব্যবহার করতে না পারলে কৃষকদের ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
তবে বেঙ্গালুরু-ভিত্তিক বৈদ্যুতিক ট্রাক্টর প্রস্তুতকারক মুনরাইডার মনে করে বাজারের সম্ভাবনা এখনও অনেকখানি রয়েছে। তারা দেখেছে কৃষিক্ষেত্রে এমন কিছু বিশেষ জায়গা আছে যেখানে বৈদ্যুতিক ট্রাক্টর ব্যবহার করা যেতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, ‘পুডলবিহীন’ চাষ একটি পদ্ধতি, যা ওয়াইনারি ও বাগানে ব্যবহার করা হয়। এর মাধ্যমে জল সাশ্রয় করা যায়, শ্রম কমানো যায় এবং বিদ্যুতের ব্যবহার কমানো সম্ভব। এই ধরনের কাজে বৈদ্যুতিক ট্রাক্টর খুব সহজেই ব্যবহার করা যেতে পারে।
পাশাপাশি, ট্রাক্টর প্রস্তুতকারক রিডইলেক্ট্রিক মুনরাইডার তাদের প্রাথমিক বিনিয়োগের জন্য $2.2 মিলিয়ন ডলার সংগ্রহ করছে। মুনরাইডারের সহ-প্রতিষ্ঠাতা অনুপ শ্রীকান্তস্বামী জানান, বিদ্যুৎ সরবরাহের বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে তারা রাজস্থান ও গুজরাটের মতো রাজ্যগুলোকে প্রথমে টার্গেট করছেন। কারণ এই রাজ্যগুলো কৃষিকাজে উন্নত এবং উদ্বৃত্ত বিদ্যুৎ উৎপাদন করে, যা তারা প্রতিবেশী রাজ্যগুলোতেও বিক্রি করে।
এই বাজারের সম্ভাবনা বুঝতে পারা কোম্পানিগুলোর মধ্যে মুনরাইডার একা নয়। Autonxt আরও একটি স্টার্টআপ, যারা 20 থেকে 45 অশ্বশক্তির বৈদ্যুতিক ট্রাক্টর তৈরি করছে। শ্রীকান্তস্বামী উল্লেখ করেছেন, বৈদ্যুতিক ট্রাক্টরের বিক্রি বৃদ্ধির হার বৈদ্যুতিক দুই চাকার গাড়ির মতোই। প্রথমে ব্যাটারিচালিত স্কুটার নিয়ে অনেক দ্বিধা ছিল, তাই পুরনো কোম্পানিগুলো এই ক্ষেত্রে আসতে দ্বিধা বোধ করছিল। এরপর ওলা ইলেকট্রিক এবং এথার এনার্জি বৈদ্যুতিক স্কুটারের বাজারকে এগিয়ে নিয়ে যায়। বৈদ্যুতিক গাড়ির চাহিদা বাড়তে দেখে TVS মোটর এবং বাজাজ অটোর মতো পুরনো ব্র্যান্ডগুলোও দ্রুত এই পথে যোগ দেয়। বর্তমানে TVS মোটর বছরে 2,39,038 ইউনিট বিক্রি করে এই বাজারে প্রথম স্থানে রয়েছে।
ভারতে ট্রাক্টরের বিদ্যুতায়নের সুযোগ অনেক, কারণ এটি বিশ্বের বৃহত্তম ট্রাক্টরের বাজারগুলোর মধ্যে অন্যতম। এটা কেবল সময়ের অপেক্ষা। শ্রীকান্তস্বামী বলেন, “একজন কৃষকের কাছে ট্রাক্টরটি ডিজেলচালিত নাকি বৈদ্যুতিক, তা কোনো বিষয় নয়। যতক্ষণ না ট্রাক্টর ঠিকঠাক কাজ করে এবং এর কার্যকারিতা বজায় থাকে।”
মেঘা রেড্ডি কর্তৃক সম্পাদিত
প্রকাশিত: 2025-10-30 07:30:00
উৎস: yourstory.com








