লাথিলায় বিলুপ্তির পথে হাতি!

 | BanglaKagaj.in

লাথিলায় বিলুপ্তির পথে হাতি!

তিমির বণিক, মৌলভীবাজার থেকে: মৌলভীবাজারের জুড়ীতে সিলেট বিভাগের একমাত্র প্রাকৃতিক বন পাথারিয়া হিলস রিজার্ভ ফরেস্টের অন্তর্গত লাঠিলা বনে এখন মাত্র পাঁচটি বন্য স্ত্রী হাতি রয়েছে। বহু বছর আগে পুরুষ হাতির অভাবের কারণে প্রজনন বন্ধ হয়ে যায়। বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করছেন যে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া না হলে, লাঠি হাতির এই পাল বিলুপ্ত হয়ে যেতে পারে – এবং এর সাথে বনের অনন্য জীববৈচিত্র্য।

পাথারিয়া হিলস রিজার্ভ ফরেস্ট চারটি বিট নিয়ে গঠিত – লাঠিটিলা, সমনভাগ, বড়লেখা এবং মাধবছড়া। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় লাথিলা বনবিটের আয়তন প্রায় ৫,৬৩১ একর। এক সময় নয়টি হাতির দল – আটটি স্ত্রী এবং একটি পুরুষ হাতি – নিয়মিত এই বনে ঘুরে বেড়াত। স্থানীয় লোকজনের মতে, প্রায় চার দশক আগে ভারতের আসাম রাজ্যের দুহালিয়া হিল বিট এলাকা থেকে এই হাতির দল সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশে ঢুকেছিল। বনভূমি ও বাঁশের বনের প্রাচুর্যের কারণে তারা লাঠিটিলাকে তাদের আশ্রয়স্থল করে তোলে। তারা দীর্ঘদিন ধরে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে আসা-যাওয়া করলেও এখন তারা মূলত বাংলাদেশের দিকেই বসবাস করে।

তবে সময়ের সাথে সাথে প্রাকৃতিক পরিবেশের পরিবর্তন হয়েছে। বন উজাড় এবং বৃক্ষরোপণ সম্প্রসারণের ফলে হাতির খাদ্য ও আশ্রয় দুটোই কমে গেছে। খাবারের সন্ধানে তারা মাঝেমধ্যে এলাকায় প্রবেশ করে। স্থানীয় লোকজন জানান, ধান ও কাঁঠালের মৌসুমে গ্রামে হাতির পাল ঢুকে পড়লেও এখন তা অনেকটাই কমে গেছে। 2019 সালে, ভারতের করিমগঞ্জ জেলার চম্পাবাড়ি এলাকায় বৈদ্যুতিক তারে ধাক্কা খেয়ে দলটির একটি হাতি মারা যায়। গুরুতর আহত অপরজনকে চিকিৎসার পর জঙ্গলে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। কয়েক বছরের মধ্যে সাত সদস্যের দল পাঁচটিতে নেমে আসে। ওই সব হাতিই স্ত্রী হাতি।

লাইথিলা বনবিট অফিসার মো. সালাউদ্দিন বলেন, ‘গত ছয় মাসে বাংলাদেশে হাতি আসেনি। আগে ধান বা কাঁঠালের মৌসুমে আসত। কিন্তু এখন তারা ভারতের দিকে বেশি সময় ব্যয় করছে, সম্ভবত তারা সেখানে বেশি নিরাপদ বোধ করছে।

বন্যপ্রাণী ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মো. রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, ‘আমাদের তথ্যানুযায়ী লাথিলায় এখন পাঁচটি মাদি হাতি রয়েছে। তাদের দলে একটি পুরুষ হাতি আনার ফলে বংশবৃদ্ধির সম্ভাবনা তৈরি হবে। আমরা এই বিষয়ে চিন্তা করছি। তিনি আরও বলেন, ‘স্থানীয় মানুষ তুলনামূলকভাবে শান্ত। তারা হাতির ক্ষতি করে না। আমরা ইতিমধ্যে সচেতনতামূলক কর্মসূচী পরিচালনা করেছি যাতে এলাকায় হাতি ঢুকলেও কেউ ক্ষতিগ্রস্ত না হয়।

পরিবেশবিদদের মতে, শুধু বন নয়, সমগ্র বাস্তুতন্ত্রের ভারসাম্য রক্ষায় হাতি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। অতএব, তাদের বিলুপ্তি মানে একটি বড় পরিবেশগত বিপর্যয়। বাংলাদেশ প্রকৃতি সংরক্ষণ জোটের আহ্বায়ক ও স্ট্যামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান ড. আহমদ কামরুজ্জামান মজুমদার বলেন, ‘এত বড় প্রাণী যদি বিলুপ্তির মুখে পড়ে, তাহলে বুঝতে হবে আমাদের বন ও বন্যপ্রাণী রক্ষায় গভীর ত্রুটি রয়েছে। হাতিদের জন্য নিরাপদ করিডোর নিশ্চিত করা জরুরি।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. মনিরুল এইচ খান বলেন, ‘লাঠিলা হাতি বেঁচে থাকলেও পুরুষ হাতির অভাবে প্রজনন বন্ধ হয়ে গেছে। যদি পুরুষ হাতি অন্য কোথাও থেকে আনা যেত বা স্থানীয় গৃহপালিত পুরুষ হাতির সাথে মেশানো যেত, তাহলে প্রজনন সম্ভব হত।’

পরিবেশকর্মীরা বলেন, ‘লাঠি টিলা এক সময় হাতির সবচেয়ে নিরাপদ স্থান ছিল। কিন্তু এখন বন বিভাগের বনায়ন প্রকল্প ও মানুষের হস্তক্ষেপে তাদের প্রাকৃতিক আবাসস্থল ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। হাতিদের রক্ষণাবেক্ষণ করতে হলে সবার আগে বনকে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে হবে।

আমার বাংলা/আরএ (ট্যাগস্টো অনুবাদ) লাঠিটিলা(টি)মাদি হাতি(টি)ভিলুত(টি)সিমন্ত


প্রকাশিত: 2025-11-01 18:13:00

উৎস: www.amarbanglabd.com