২৪টি ব্যাংকে পুঁজির অভাবে সংকটে দেশের আর্থিক খাত
দেশের বিভিন্ন ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। 24টি ব্যাংক মূলধন লোকসানে রয়েছে। দেশের আর্থিক খাত সংকটের মুখে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে আর্থিক খাতে যে লুটপাট হয়েছে তার কারণে ব্যাংকগুলোকে বেশি টাকা দিতে হয়েছে। খারাপ ঋণ, নিরাপত্তা মজুদ (একটি নির্দিষ্ট উদ্দেশ্যে লাভের অংশ থেকে সৃষ্ট তহবিল, ভবিষ্যতে ব্যবহার করা) বা প্রভিশনের অভাবের কারণে এই খাতে মূলধনের ক্ষতি আশঙ্কাজনকভাবে বাড়ছে। এসব ব্যাংকের লোকসানের পরিমাণ ১ লাখ ৫৫ হাজার ৮৬৬ কোটি টাকা। গত মার্চ শেষে ২৩টি ব্যাংকের লোকসান ছিল ১ লাখ ১০ হাজার ২৬০ কোটি টাকা। আবারও লোকসানে পড়েছে এনআরবিসি ও আল-আরাফা ইসলামিক ব্যাংক। এ সময় লোকসান থেকে বেরিয়ে আসে বিদেশি খাতের হাবিব ব্যাংক। জানতে চাইলে এনআরবিসি ব্যাংকের চেয়ারম্যান আলী হোসেন প্রধানিয়া বলেন, গত বছরের ডিসেম্বরেও এনআরবিসি ব্যাংকের খেলাপি ঋণ ছিল মাত্র ৫ শতাংশ। এখন তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে সাড়ে ২৮ শতাংশে। এতে বিপুল পরিমাণ নিরাপত্তা তহবিল বা প্রভিশন রাখতে হয়। ফলে মূলধন লোকসানের মুখে পড়েছে ব্যাংকটি। প্রকৃত চিত্র বের করার পর রূপান্তরের চেষ্টা করা হবে। ব্যাংক কর্মকর্তারা জানান, বিগত সরকারের আমলে অনিয়ম-দুর্নীতির মাধ্যমে ঋণের নামে বিপুল পরিমাণ অর্থ উত্তোলন করা হয়। এসব ঋণ খেলাপি হলেও খেলাপি দেখানো হয়নি। অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতায় আসার পর লুকিয়ে থাকা খেলাপিদের সামনে আনা হয়। এতে বাড়ছে ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণের সংখ্যা। বর্তমানে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ৭ লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। উল্টো চাহিদা অনুযায়ী নিরাপত্তা মজুদ রাখতে পারছে না ব্যাংকগুলো। ফলে দেশের পুরো আর্থিক খাতের স্থিতিশীলতা ঝুঁকির মধ্যে ফেলে এসব ব্যাংক মূলধন লোকসানের শিকার হচ্ছে। জুনের শেষে ব্যাংকিং সেক্টরে ক্যাপিটাল রিস্ক-অ্যাডজাস্টেড অ্যাসেট রেশিও (CRAR) 4.47 শতাংশে দাঁড়িয়েছে, বাংলাদেশ ব্যাংক রিপোর্ট করেছে – যা আন্তর্জাতিক ফ্রেমওয়ার্ক অনুযায়ী ন্যূনতম 10 শতাংশ হওয়া উচিত। গত মার্চ শেষে ব্যাংকিং খাতে সিআরএআর ছিল ৬ দশমিক ৭৪ শতাংশ। CARA হল একটি ব্যাঙ্কের মূলধনের সাথে তার ঝুঁকি-ভিত্তিক সম্পদের অনুপাত – যেখানে সম্পদগুলি ঝুঁকির স্তর অনুযায়ী গণনা করা হয়। জুন শেষে চারটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক, ১০টি বেসরকারি ব্যাংক, আটটি ইসলামী ব্যাংক এবং দুটি বিশেষায়িত ব্যাংক লোকসানে রয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, চারটি সরকারি ব্যাংকের মধ্যে সবচেয়ে বেশি লোকসান হয়েছে জনতা ব্যাংকের। জুন শেষে এ ব্যাংকের মূলধন লোকসান ১৭ হাজার ২৫ কোটি টাকা। এরপর শীর্ষস্থানীয় ব্যাংকের ৭ হাজার ৬৯৮ কোটি টাকা। রূপালী ব্যাংকের 4,173 কোটি টাকা লোকসান হয়েছে এবং লুট করা বেসিক ব্যাংকের 3,783 কোটি টাকা লোকসান হয়েছে। জানতে চাইলে বেসিক ব্যাংকের চেয়ারম্যান হেলাল আহমেদ চৌধুরী বলেন, এক সময় বেসিক ব্যাংক অনেক ভালো ছিল। মাঝের অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। পুনরুদ্ধার এখনও চলছে। এদিকে বেসরকারি খাতে সবচেয়ে বেশি মূলধন ঘাটতি রয়েছে ন্যাশনাল ব্যাংকে। জুন শেষে ব্যাংকটির লোকসান ছিল ৮ হাজার ৪৫৯ কোটি টাকা। এর পরে, এবি ব্যাংকের মূলধন 6,775 কোটি টাকা। এ ছাড়া ডাকাতির শিকার পদ্মা ব্যাংকের মূলধন ক্ষতি হয়েছে ৫ হাজার ৬১৯ কোটি টাকা। এছাড়া আইএফআইসি ব্যাংক ৪,৫১ কোটি, বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংক ১,৮৭৮ কোটি, প্রিমিয়ার ব্যাংক ১,৬৪০ কোটি, ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক ১,৩৮৫ কোটি, এনআরবিসি ব্যাংক ৩১৬ কোটি, সিটিজেন ব্যাংক ৮৬ কোটি এবং সীমান্ত ব্যাংক ৪৫ কোটি টাকা লোকসান করেছে। শরীয়াহ ভিত্তিক ব্যাংকগুলোর মধ্যে মূলধনের ঘাটতি সবচেয়ে বেশি ইউনিয়ন ব্যাংকে। জুন শেষে ব্যাংকটির লোকসান ছিল ২১ হাজার ৩৮৭ কোটি টাকা। দ্বিতীয় বৃহত্তম ক্ষতি হয়েছে ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশের। এ ব্যাংকের লোকসান ১৮ হাজার ৫০৪ কোটি টাকা। তৃতীয় বৃহত্তম ক্ষতি হয়েছে ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের যা ১০ হাজার ৫০১ কোটি টাকা। এছাড়া গ্লোবাল ইসলামিক ব্যাংকের লোকসান ৫ হাজার ৫৫২ কোটি টাকা, সোস্যাল ইসলামী ব্যাংকের লোকসান ২ হাজার ৭৯০ কোটি টাকা, আইসিবি ইসলামিক ব্যাংকের লোকসান ১ হাজার ৯৭৫ কোটি টাকা, এক্সিম ব্যাংকের লোকসান ৯০১ কোটি টাকা এবং আল-আরাফা ব্যাংকের লোকসান ২৫৪ কোটি টাকা। বিশেষায়িত ব্যাংকগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি লোকসান কৃষি ব্যাংকের। শুধু বিশেষায়িত নয়, পুরো ব্যাংকিং খাতে সবচেয়ে বেশি লোকসান হয়েছে এই ব্যাংকের। তথ্য অনুযায়ী, জুন শেষে কৃষি ব্যাংকের লোকসান হয়েছে ২৯ হাজার ১৬১ কোটি টাকা। রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকের লোকসান ২ হাজার ৬২০ কোটি টাকা। সূত্র-যুগান্তর। saju/nea
প্রকাশিত: 2025-11-08 23:45:00
উৎস: www.bd24live.com










